অবৈধ দখলে বনের ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
সারা দেশে বন বিভাগের দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি অবৈধ দখলে। এই বনভূমির মূল্য প্রায় ১০ হাজার ১৯৭ কোটি ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৯০ টাকা। দখলদাররা বন বিভাগের এসব জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি হাট-বাজার, দোকান-পাট ও ভারী শিল্পসহ ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
দখলদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬। এরই মধ্যে এসব অবৈধ দখলদারের তালিকা চূড়ান্ত করে মামলা করা শুরু হয়েছে। চালানো হবে উচ্ছেদ অভিযানও।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কমিটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বন বিভাগের অবৈধ দখল হওয়া জায়গা ও দখলদারদের তালিকাসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সব বন বিভাগ থেকে বনভূমি অবৈধ দখলদারদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তালিকায় দখলদারদের নাম, ঠিকানা, জমির পরিমাণ এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের তালিকায় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাট-বাজারও রয়েছে। অনেকে দখল করা জমিতে চাষাবাদও করছে।
দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি অবৈধ দখলদারদের দখলে। এর মধ্যে অবৈধ দখল করা সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর। এসব জমির দখলদার ৮৮ হাজার ২১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। অবৈধ দখল করা অন্যান্য বনভূমির পরিমাণ এক লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ একর। এসব জমির দখলদার ৭২ হাজার ৩৫১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
অবৈধ দখল হওয়া এই বনভূমির মূল্য প্রায় ১০ হাজার ১৯৭ কোটি ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৯০ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বনের জমি দখল করে হাট-বাজার, কটেজ, রিসোর্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি নির্মাণ, কৃষি, বাগান, চারণভূমিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২৯৯ জন অবৈধ দখলদার এক হাজার ৭২১.৮৯ একর জমি দখল করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।
বন বিভাগের এই বিপুল পরিমাণ বনভূমি অবৈধ দখলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএস রেকর্ড মূলে রেকর্ডভুক্ত বনভূমি পরবর্তী সময়ে এসএ/আরএস/বিএস জরিপে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। আর ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বনভূমি জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে পাশের বনভূমি দখল হয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব বনভূমি দখল করেছে।
কমিটির বৈঠকে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, প্রাথমিকভাবে অবৈধ দখলে থাকা এক লাখ ৩৮ হাজার একর বনভূমি উদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮২০ একরে। হাট-বাজার, দোকানপাঠসহ ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪ হাজার ১৪৯ একরে।
দখলদারদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে পাঁচ হাজার ২১৮টি পিওআর মামলা করা হয়েছে। নিম্ন আদালতে ২৩৫টি দেওয়ানি মামলা এবং উচ্চ আদালতে ৫৭টি রিট মামলা ও ১৫টি আপিল মামলা করা হয়েছে।
বৈঠকে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানান, অবৈধ দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তালিকা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে অবৈধ দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনে প্রস্তাব পাঠানো হবে। এরপর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ মামলা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নোটিশ দেবে। তারপর চালানো হবে উচ্ছেদ অভিযান।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশজুড়ে বনভূমি দখলদার ও দখল করা জমির একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেছে। দখল করা এসব জমি উদ্ধারে কিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে কমিটিকে বিস্তারিত জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কমিটির পক্ষ থেকে অবৈধ দখলে থাকা ওই সব বনভূমি উদ্ধারে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’